"হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে কিছু সুবিধাবাদী রানা দাশ-রমেশ চন্দ্ররা আর বলির পাঁঠা হচ্ছে মাথা মোটা নিরীহ হিন্দুরা"
![]() |
ধর্মীয় সম্প্রীতি |
আমি আজ যে বিষয়টি নিয়ে লিখছি সে বিষয়টি নিয়ে ২০২১ সালেই লিখার কথা ছিলো কিন্তু কুমিল্লায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দূগা মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনায় আর লোখ হয়ে উঠেনি। আজ যে সকল প্রিয় হিন্দু ভাইয়েরা এই নিবন্ধনটি পড়বেন তারা দয়া করে শেষ পর্যন্ত না পড়ে মন্তব্য করবেন না।
ভারতীয় উপ মহাদেশে বাংলাদেশ অংশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস হাজারো বছরের ইতিহাস। এখানে হিন্দু-মুসলিমদের সহ অবস্থান বিশ্বের মানুষের নজর কাড়ে। এখানে মুসলমান মারা গেলে হিন্দু বন্ধু অজরে কান্না করতে দেখা যায়, আবার হিন্দুদের পূজার সময় নৌকা ডুবিতে নিহত তীর্থ যাত্রীদের পরিবারে সবার আগে ইসলামি রাজনৈতিক দলের প্রধানের স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ভোর বেলা সমবেদনা প্রকাশ সহ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে দেখ যায়। এদেশেই সুবিধাবাদীরা যখন হিন্দুদের মূর্তি ভেঙ্গে আলেমদের ফাঁসাতে যায় তখনই হিন্দুরা বিবৃতি দিয়ে জানায় এসকল অপকর্মে কোন আলেম জড়িত থাকে না। আবার কুমিল্লায় হিন্দুদের মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মসজিদ গুলোর মিম্বার হতেই জুমা'র নামাজের দিন এক যোগে এই জঘন্য ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। নিরপেক্ষ ভাবে একবার চিন্তা করে দেখেন তো দুনিয়ার কোন দেশে এরকম সম্প্রতি দেখাতে পারবেন? পারবেন না। তাই বলে আমি এমনটা বলছি না যে এদেশে অমুসলিমদের উপর কোন নির্যাতন হয় না। অবশ্যই হয়, আমি বলি এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই নির্যাতন গুলো সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান ও আলেম সমাজ কখনোই প্রশ্রয় দেয় না।
তাইলে এই ঘটনা গুলো সংগঠিত করে কারা এই প্রশ্ন আসবেই। এই ঘটনা গুলো ঘটায় সুবিধা বাদী কিছু প্রভাবশালী লোক তারা ধর্মের লেবাস লাগিয়ে রাখলেও আদতে তারা কোন ধর্মই মানে না। কখনোই দেখবেন না ওরা মসজিদে যেতে।৷ এদের আসলে কোন ধর্মই নাই। একজন নামাজি মুসলমান কখনোই একটা মন্দিরে ঢিল ছুড়বে না, ছুড়তে পারে না। বিগত বছরে যত ঘটনা হয়েছে সব গুলোর মূলে কোন দাঁড়িওয়ালা বা টুপিওয়ালা নয়। ঘটনার পড়ে ঝুকের বশে কেউ জড়িয়ে গেলে ঐটা আলাদা ভাবে ভাবতে হবে।
এ পর্যন্ত কোন হিন্দুকেও দেখিনি সাধারন আলেম সমাজ কিংবা সাধারন আপামর মুসলিম সমাজকে জড়িয়ে অভিযোগ করতে। কেননা হিন্দুরা ঐতিহাসিক ভাবেই এ অঞ্চলে একটু ঠান্ডা মাথার ও প্রখর বুদ্ধি সম্পন্ন জাতি। ব্রিটিশ আমল হতেই হিন্দুরা তাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে আসছে। আমরা বলি হিন্দুরা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ব্রেইনের লোক হয়।
কিন্তু রানা দাশ গুপ্ত,রমেশ চন্দ্র ঘোষ ও ভারতের আর এস এস সদস্য গোবিন্দ প্রমানিকের মত কিছু নাম ধারী সুবিধাবাদি লোক হিন্দুদের আবেগ ও অনুভুতি কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে বাংলাদেশে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংশ করার পায়তারা করছে, কিন্তু হিন্দুরা বেমালুৃম সব ভুলে যাচ্ছে।
আরে দাদা এই রানা দাশ ও রমেশ চন্দ্ররা ভিদেশী নাগরিক,নিজেরা হিন্দু নয়, আদতে না*স্তি*ক। দরবার লাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করে ঝামেলা দেখলে কেটে পড়বে। আপনারা খোঁজেও পাবেন না। এরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসে প্রার্থনা করে বাংলাদেশ অখন্ড ভারতের অংশ করতে। এতে করে প্রমান হয় তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে,আর আপনারা তাদের সমর্থন করেন।কখনো কোন দরবার হলে তারা ঠিকই পালিয়ে যাবে কিন্তু আপনারা হবেন বলির পাঁঠা। আর আপনারা এগুলো প্রতিবাদ করেন না কারন বাংলাদেশ ভারতের অংশ হলে স্বর্গ রাজ্য পেয়ে যাবেন এই আশায়। আসলে না। ভারতের চেয়ে হাজার গুন ভাল আছে বাংলাদেশ। এদেশের ২০ লক্ষ হিন্দু যে ভারতে গেছে তাদের ৯০% লোক আজও ভারতের নাগরিকত্ব পায় নি। সারাক্ষন হাঙ্গামা লেগেই আছে আর তাদের দেশে কখনোই শান্তি আসার সম্ভাবনা নাই। রানা দাশ আর রমেশ চন্দ্ররা আপনাদের আবেগ ব্যবহার করছে তাদের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। এটাকেই ধর্ম ব্যবসা বলে। এজন্যই শিরোনামে মাথা মোটা শব্দটা লিখেছি।
এদেশে হিন্দু নির্যাতন হয় না এটা যারা বলে আমি বলি আপনারা কাঠের চশমা পড়ে আছেন অথবা নিজেরা জানেনই না। গোপনে গোপনে অনেক কিছুই ঘটে যায় যা হিন্দুরা মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়। প্রকাশ করলে আরো বিপদ হয়। আমার কাছে অনেক ঘটনার ফাইল ফুটেজ আছে। কিন্তু আমার কথা হলো এগুলো যে সকল মুসলমানরা করে তারা নিজের ধর্মের লোকের সাথেও সুযোগ পেলে করে, এদের কোন জাত নাই, এদের কোন ধর্ম নাই। বিস্তারিত আর বললাম না এই বিষয়ে, বুঝে নিবেন।
![]() |
বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি |
এবার কিছু প্রশ্ন আপনাদের বিবেকের কাছে করি, নিরপেক্ষ ভাবে চিন্তা করবেন। কোন দেশে বা এলাকায় সংখ্যায় কম কোন সম্প্রদায় থাকলে প্রাকৃতিক ভাবেই কিছু সমস্যা ফেস করতে হয়। এটা দুনিয়ার সব জায়গায়ই হয়। আর আমরা বাংলাদেশীরা তো এখনো ফেরেশতার পর্যায় পৌঁছতে সক্ষম হই নি। তাইলে কিছু সমস্যা থাকবেই। আপনারা যখন নিজেদের সমাজে থাকেন তখন কি ভাইয়ে ভাইয়ে, বাপে ছেলে, গুষ্টিতে গুষ্ঠিতে কোন সমস্যা হয় না? নিজেদের মধ্যে একের প্রতি অন্যজন কখনো নির্যতন করে না? অবশ্যই করে। এই সময়ে কি আপনারা নির্যাতিত হয়ে আপনজন ছেড়ে ভারতে চলে যান? যান না তো, কারন এক সাথে থাকলে সবারই কিছু সেক্রিফাইস করতে হয়।
তাইলে মুসলমানদের সাথে কোন সমস্যা হলেই আপনারা কেন কথায় কথায় ভারতে চলে যাবার কথা বলেন? ভারত কি আপনাদের বাপ-দাদার দেশ? আপনাদের বাপ-দাদার দেশ তো বাংলাদেশ!! ভারতে আপনাদের কে থাকে? যারা ভারতে গেছে খবর নিয়ে দেখেন তারা কেমন আছে? খুব ভাল নেই। আপনারা ভারতে গেলে আপনাদের স্থান দিয়ে আপনাদেরকে ভারতীয়রা আপন করে না। বাংলাদেশে যেমন রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়েছে কিন্তু তাদেরকে আমরা নাগরিক মনে করি না ঠিক ভারতেও বাংলাদেশের হিন্দু মাইগ্রেট হলে রোহিঙ্গাদের ৃত আচরন করে ভারতীয়রা। ওরা আপনাদের জন্য যে কান্না করে তা কুমীরের কান্না, তাদের দেশকে আন্তর্জাতিক মহলে অসাম্প্রদায়িক প্রমানের জন্য এটা করে, আদতে ভারত কতটা অসাম্প্রদায়িক তা নিজেই দেখছেন।
হিন্দু -বৌদ্ধ -খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গঠন করেছে রানা দাশ আর রমেশরা আপনাদের উদ্ধার করার জন্য। উদ্দেশ্য যদি সাম্প্রদায়িক সহবস্থানই হয় তাইলে এটা সর্ব ধর্মীয় ঐক্য পরিষদ হলো না কেনো? হবে না কারন উদ্দেশ্য ভাল না। এই হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মূলে আছে না*স্তি*কের দল। এই সুবিধাবাদী না*স্তি*করা সারা দুনিয়া ব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘাড়ে চড়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরী করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে।
অতএব, বাংলাদেশে যাদের জন্ম, এদেশই যাদের পিতৃ ভূমি এদেশেই তারা থাকবে। বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলে তার বিচার হবে কিন্তু অন্য দেশে যাওয়া যাবে না, যেতে দেব না। যেখানে জন্মেছেন সেখানেই মরতে হবে। কোথায় যাবেন মায়ের বুক ছেড়ে? খাঁচায় আটকে রাখব তবুও স্বদেশ ছাড়তে দেব না আপনাদের।রানা দাশ, রমেশরা আদতে নাস্তিক, ওরা হিন্দুও না মুসলমানও না। ওদের কুপরামর্শে কেউ ভুল পথে পা বাড়াবেন না। যারা ওদের মিষ্টি কথায় ভুলে যাবেন তারাই মাথা মোটা হিন্দু।
লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ