"রক্তাক্ত জুলাই ২৪'শে ছাত্রদের অর্জন ও ব্যর্থতা"
নি: সন্দেহে আমাদের দেশের রক্তাক্ত জুলাই ২৪ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সারা বিশ্ব তাকিয়ে দেখেছে যে কিভাবে যুব সমাজ তথা ছাত্ররা স্বৈরাচারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে জাতীয় অধিকার আদায় করতে হয়। আমি আজ এই আন্দোলনে অর্জন ও ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। যদিও এদেশের মানুষ সফলতার কথা শোনতে রাজি থাকলেও ব্যর্থতার কথা শোনলে গালাগাল করে তবুও বলে যাব।
অর্জন:
১। রক্ত দেওয়ার যে বিরল দৃষ্টান্ত ছাত্ররা তৈরী করেছে তা বিশ্ব ইতিহাসে অভূতপূর্ব।
২। পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়া:
এটা আরেকটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত যে একজনকে গুলি করে মারলে বাকিরা দৌড়ে না পালিয়ে আবারো বুক পেতে দেয় গুলির সামনে।
৩।নারী পুরুষের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনঃ
এবারের আন্দোলনে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহন এটাও স্বৈরাচারকে হতবম্ভ করেছে আর বিশ্বের নির্যাতিত জনতার অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে।
৪। স্বল্প সময়ে স্বৈরাচার সমূলে পতন:
পৃথিবীর বুকে এই আন্দোলন একমাত্র আন্দোলন যা এক দিনেই একটি সরকারের সকল মন্ত্রী ও এমপিদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
৫। আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ:
আন্দোলনের পর পৃথিবীর সকল সভ্য দেশেই কয়েকদিন গনহত্যা ও নির্যাতন চলে অথচ এই আন্দোলনের পর দিন হতেই পুলিশ বিহীন রাষ্ট্র টি মুটামুটি বড় ধরনের অঘটন ব্যতিত চলছে।
৬। দূর্যোগ নিয়ন্ত্রন:
দেশের টালমাটাল অবস্থায় প্রায় ২কোটি পানি বন্ধির খাবার বিতরন ও উদ্ধার কাজ নিয়ন্ত্রন ছাত্র সমাজের সহ, জাতির একটি বিরাট অর্জন।
৭। বিশ্ব সমাজে প্রভাব:
আমরা আগে বিদেশের আন্দোলন গুলাকে অনুপ্রেরনার ইতিহাস হিসাবে পড়তাম, এখন পাকিস্তান, ভারতের সেভেন সিস্টার্স, আফ্রিকার নানান দেশ আমাদের আন্দোলন অনুকরন করছে। সারা বিশ্বের সকল নির্যাতিত মানুষের মুক্তির স্লোগান হচ্ছে "তুমি কে আমি কে, বাংলাদেশ বাংলাদেশ"। এ যেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির স্লোগান।
৮। ধর্মীয় সম্প্রীতি:
মাদরাসা ছাত্র সহ সকল ছাত্ররা মিলে মন্দির পাহারা পৃথিবীতে বিরল।
তা ছাড়াও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন, রাস্তা-ঘাট পরিস্কার করন সহ হাজারো সফলতা যা বর্ননা করে শেষ করা সম্ভব না। এ সকল অর্জন জন মনে বিরাট আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে।
আসুন ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলিঃ
১। শহীদদের তালিকাঃ
এই রক্তাক্ত জুলাই ২৪ এর বিজয়ীদের সবচেয়ে বড় ও দু:খ জনক ব্যর্থতা হলো এখনও দেড় মাস হলো কিন্তু আন্দোলনে শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে ব্যর্থতা। এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে?
২। সকল আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে ব্যর্থতাঃ
এই আধুনিক যুগের বাংলাদেশে, মানবতার বাংলাদেশে আজও শোনতে হয় জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য সন্তান বিক্রি করতে হয়েছে। যদিও পরে তাকে সাহায্য করা হয়েছে, আমার প্রশ্ন হলো আগে হলো না কেনো? তাইলে কি আমরা ধরে নিতে পারি না যে আরো অনেক আহত অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আছে যাদের আমরা আজও খবর পাই নি? ছাত্ররা এই ব্যর্থতাকে কি দিয়ে ঢাকবে?
৩। ঢাবিতে বন্যার্তদের জন্য জমাকৃত টাকার হিসাবে ব্যর্থতাঃ
বানবাসীদের জন্য মানুষ এবার প্রান উজার করে দান করেছে ছাত্রদের নিকট। এই জাতীয় ঐক্য ও মানুষের প্রান উজার করে সব কিছু দিয়ে দেওয়া বানবাসীদের জন্য ছাত্রদের বিশ্বাস করেই মানুষ দিয়েছে।কিন্তু ছাত্ররা তার সঠিক ভাবে বন্টন করলেও জমাকৃত টাকার হিসাব বিগত তিন সপ্তাহে প্রদান না করার ব্যর্থতা মানুষকে হতাশ করেছে এবং এটা যে ভোগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৪। বেসরকারী বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রদের বঞ্চিত করা:
এবারের আন্দোলনে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অবদান নি:সন্দেহে অনস্বীকার্য, কিন্তু অত্যন্ত দু:খ জনক ও চরম বৈষম্যের বিষয় হলো আন্দোলনকারীরা এই বেসরকারী বিশ্ব বিদ্যালয়ের কোন ছাত্রদেরকে সমন্বয়ক হিসাবে রাখে নি এবং তাদের অবদানের কথা স্বীকার পর্যন্ত করে নি।
৫। হলে না ফেরাঃ
ছাত্রদের প্রথম কাজ পড়াশোনা। কিন্তু ছাত্ররা তাদের প্রধান কাজ বাদ দিয়ে অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হতেই বেশী মজা পাচ্ছে। এদের নিকট এখনও দেখলামনা যে হলে ফিরে পড়াশোনায় মন দেওয়ার কোনো প্রচেষ্টা। ওরা লীগ জুজুর ভয় দেখিয়ে হলে উঠতে চাচ্ছে না, অথচ লীগ এখন হলে ঝামেলা করবে না এটা পাগলও বুঝে। এরা হলে ফিরতে বিলম্ব এদের চরম ব্যর্থতা।
৬। সারজিসদের বাড়াবাড়িঃ
সাারজিস গংরা এখন দেশ গড়ার চেয়ে নিজের আখের গুছাতে ব্যস্ত বলে মনে হয়। সরজিসের নামে ওর বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের বাড়াবাড়ি ও নানান স্থানে চাঁদাবাজির এত এত প্রমান সরজিসকে জানানোর পরও সে ও তার সহকর্মীরা এই বিষয়ে নিয়ন্ত্রনের ব্যর্থতা চরম হতাশার বিষয়।
৭। মাদরাসা ছাত্র ও আলেমদের স্বীকৃতিঃ
এবারের আন্দোলনে মাদরাসার হাফেজ ও আলেম মিলেে ৭৭জন শহীদ হয়েছে, অথচ সমন্বয়কদের মুখে কোন দিন এই স্বীকৃতিটা আমরা শোনতে পেলাম না, কোন মাদরাসায় বড় প্রোগ্রাম করতেও শোনলাম না।
৮। মুরব্বীদের অপমান:
আন্দোলন কারীরা কথায় কথায় মুরব্বীদের তারা অপমান করে।আন্দোলন কারীদের সকলকে বলতে শোনা যায় বড়রা কি করেছে, বড়দের কারনে দেশের এই অবস্থা, বড়রা হেন করেছে, তেন করেছে। আমি স্বীকার করছি বড়দের একটা অংশের কারনে স্বৈরাচার ঝেঁকে বসেছিলো, তাই বলে বড়দের সবাই খারাপ?
°তাইলে প্রশ্ন থাকে বিদেশের মাটিতে বিদেশী ডিপ্লোমেটদের কারা এদেশের বিষয়ে অবগত করেছিলো?
° কারা এই আন্দোলনে অর্থের যোগান দিয়েছিলো, মুরব্বীরা না ছাত্ররা?
°কনক সারেয়ার, মুশফিক আনসারী, সাংবাদিক ইলিয়াস ও ড.পিনাকী সহ কয়েক ডজন অনলাইন এক্টিভিস্ট তারা কি মুরব্বী নয়?
° মুরব্বীদের গালিগালাজ করেন ভালো কথা কিন্তু সকল মুরব্বীকে যদি আপনারা অপরাধী মনে করেন তাইলে আরেকটা বিষয় সামনে আসে, সকল মুরব্বী চোর হলে ছাত্ররা সবাই চোরের সন্তান, সকল মুরব্বী অত্যাচারী হলে সকল ছাত্র অত্যাচারীর সন্তান। সকল মুরব্বী অপরাধী হলে সকল ছাত্র অপরাধীর সন্তান এবং এই অপরাধীর টাকা, খাবার ও রক্ত সকল ছাত্রদের শরীরে বহমান। অতএন আপনারাও দুধের ধোয়া তুলসীপাতা নয়।
আমি আশা করবো আমার লেখা দেখে আপনারা ব্যর্থতা গুলো সংশোধন করে অর্জনটাকে প্রধান্য দিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে যাবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ