"অ্যান্টি-সেমিটিজম কী"
কোনো অপরাধী কখনোই চায় না, তার অন্ধকার জীবনের ইতিহাস সাধারণ মানুষের সামনে ফাঁস হয়ে যাক। তাকে নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নেতিবাচক কিছু লেখা হোক এবং আইন বিভাগ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করুক।
সে চায় পৃথিবীর সব সম্পদ একাই ভোগ করবে, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে পারবে না। তার বিরুদ্ধে যেন কেউ নেতিবাচক কিছু লিখতে না পারে, সেজন্য পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থের বিনিময়ের কিনে নেয়। আবার সম্পদের লোভ দেখিয়ে পুরো প্রশাসনকে নিজের পকেটে পুরে রাখে। এভাবে সে সমাজে ভিআইপির মর্যাদা পেতে শুরু করে। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই যেন আইন বিভাগের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এভাবেই জন্ম নেয় নতুন সব গডফাদার, যারা সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থেকে একসময় শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। তারা এতটাই ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে, যে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গেলে প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে অন্তত কয়েকবার ভাবতে হয়।
আর যখন কোনো সাহসী ব্যক্তি তথ্য-প্রমাণসহ এই অপরাধীদের অন্ধকার জীবনের ইতিহাস ফাঁস করার প্রচেষ্টা করে, তখন সমাজের চতুর্দিক থেকে একের পর এক বিদ্রুপাত্মক সমালোচনা আসা শুরু করে। যেহেতু সংবাদ সংস্থাগুলো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে, তাই মনিবের সম্মান রক্ষায় তারা উঠেপড়ে লেগে যায়। তারা সেই সাহসী। ব্যক্তিকে একের পর এক মনগড়া অভিযোগে ফাঁসাতে শুরু করে। মূলত কিছু পূর্বপরিকল্পিত কৌশল প্রতিটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানই তৈরি করে রাখে, যেন উদ্ভূত প্রতিটি পরিস্থিতি তৎক্ষণাৎ মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।
সাহসী সেই ব্যক্তিটি যে তথ্যই উপস্থাপন করুক না কেন, বিক্রি হয়ে যাওয়া সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো তার সকল প্রচেষ্টাকে পণ্ড করে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে একসময় সাধারণ মানুষ গডফাদারদের বিরুদ্ধে কথা বলার ন্যূনতম সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলে। জরাজীর্ণতা ও বিভিন্ন কুসংস্কার সাধারণ মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখে। সবাই ভাবে, এদের নিয়ে কথা না বলাই ভালো। কথা বলতে গেলে না জানি কোন মিথ্যা অপবাদে দোষী হতে হয়। ফলে গডফাদাররা সব সময় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। সাংবাদিকতা শিল্পের ওপর Noam Chomsky তার বই Manufacturing Consent নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
ওপরের উদাহরণ আজকের সাম্রাজ্যবাদী ই*হু*দিদের সাথে মিলে যায়। মানুষ যেন তাদের বিরুদ্ধে এক হতে না পারে, সেজন্য তারা স্বাধীন তথ্য প্রবাহের ওপর আঘাত হেনেছে। ভয় ও কুসংস্কারের রাজত্ব কায়েম করতে তারা অ্যান্টি-সেমিটিজম ধারণার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি যে নতুন কিছু—তা নয়; আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা শিল্পে এটি বহুল ব্যবহৃত ও আলোচিত একটি বিষয়। ইজরাইল সম্পর্কিত অনেক ইস্যুতে আজ | এই শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে; যদিও এর প্রথম ব্যবহার হয়েছিল ১৮৭৯ সালে। জার্মানিতে। তবে অধিকাংশের কাছে এই শব্দকে নতুন বলে মনে হতে পারে ।
ই*হু*দি*দের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের নেতিবাচক ধারণা পোষণ করাকে অ্যান্টি-সেমিটিজম বলা হয়। আর যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে এই ধারণা পোষণ করে, তাকে বলা হয় অ্যান্টি- সেমাইট। আপনি সত্য না মিথ্যা বলছেন, তা এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়।
প্যালেস্টাইনে আরবদের অধিকার নিয়ে কথা বলুন
বলশেভিক বিপ্লবে তাদের গণহত্যার কথা বলুন
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তাদের ষড়যন্ত্রের কথা বলুন
চলচ্চিত্রশিল্পে তাদের অশ্লীলতার কথা বলুন
বিশ্বযুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্রের কথা বলুন।
শিক্ষাব্যবস্থায় তাদের ষড়যন্ত্রের কথা বলুন
ধর্ম প্রচারের নামে রা*বা*ই*দের বিভ্রান্তি ছড়ানোর কথা বলুন
অনুসন্ধানী কোনো রিপোর্টে তাদের জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করুন।
তবে মনে রাখুন, এ জাতীয় কোনো একটি কাজ করেছেন তো আপনার ওপর অ্যান্টি-সেমাইট লেবেল চাপিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে যাবে ।
এশিয়া বা আফ্রিকায় এ বিষয়টির খুব একটা প্রচলন না থাকলেও ইউরোপ-আমেরিকায় এটি | রীতিমতো হইচই-এর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনিক দপ্তরের সবচেয়ে উচ্চপদ থেকে নিম্নপদ পর্যন্ত সবাই এ সম্পর্কে অবগত। প্রতিটি দেশে কিছু রাজনৈতিক আগর থাকে, যেখানে নতুন নতুন রাজনীতিবিদদের শুনে অবাক হবেন, বিশ্বের অধিকাংশ রাজনৈতিক আঁতুড়ঘরগুলোকে তারা একটি চেইন প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কেউ-ই কথা বলবে না। তাদের মূল লক্ষ্য জেরুজালেম। তারা জানে- হাজার বছরের পুরোনো এই ভূমিকে পুনরায় ই*জ*রাইলের রাজধানী করা অতটা সহজ নয়। যেকোনো মুহূর্তে আক্রমণের আশঙ্কা তাদের সব সময় বিচলিত করে রাখে। তারা ভৌগোলিক সীমারেখায় | ফাটল সৃষ্টি করে অসংখ্য নতুন রাষ্ট্র তৈরির ইন্ধন জুগিয়েছে। জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার নামে এক দেশের সাথে অপর দেশের দ্বন্দ্ব বাধিয়ে দিয়েছে।
ধরুন, গাজায় ই*জ*রা*ইলি বিমান হামলার প্রতিবাদে ইউরোপের কয়েকটি দেশ তাদের পার্লামেন্টে ইজরাইলবিরোধী আইন পাস করল। এবার জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে তারা নিজেদের অতীত নির্যাতনের ইতিহাস এমনভাবে উপস্থাপন করতে শুরু করবে, যেন মানুষের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
কবে কোন হলোকাস্টে ১৫ বছরের এক কিশোরী শত্রুবাহিনীর নির্মম নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেছে, তা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় কলাম ছাপানো শুরু হবে। ব্যাবিলন সেনাপতি নেবুচাদনেজারের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত তারা যত নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তা নিয়ে একের পর এক প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরা হবে। সবশেষে সমাপ্তি টানবে এই বলে যে জাতি হাজার বছরের নির্যাতন সহ্য করে একবিংশ শতাব্দীতে পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস ফিরে পেয়েছে, তাদের প্রতি ইউরোপিয়ান দেশগুলোর এমন অ্যান্টি- সেমেটিক মনোভাব বিশ্ববাসীকে হতাশ করেছে।
এ নিয়ে ই*হু*দি*রা টকশোর আয়োজন করবে, যেখানে তাদেরই নিয়োগপ্রাপ্ত এজেন্টরা প্রতিনিধিত্ব করবে। এমন সব যুক্তি উপস্থাপন করবে, যা শ্রোতা সমাজের মগজধোলাই করে ছাড়বে। তারা বুঝিয়ে ছাড়বে, তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনগুলো-ই ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম ও হৃদয়বিদারক। তাদের প্রতিটি জীবন খুবই মূল্যবান। কেবল আত্মরক্ষা করতেই তারা গাজার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা করেছে। | যারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং যারা তাদের পক্ষ নিয়ে পার্লামেন্টে আইন পাশ করেছে, তারা উভয়েই অ্যান্টি-সেমাইট। এমনকী সেই ফেরাউন, যার হাতে বনি | ইজরাইলের হাজারও শিশুপুত্র নিহত হয়েছে, সেও ছিল অ্যান্টি-সেমাইট ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ