"তামাক-জর্দা ও পান হালাল, না হারাম?"
জর্দা তামাক জাতীয় একধরনের নেশাজাত দ্রব্য, এই অখাদ্য বস্তুটি সমাজের অনেক মানুষই পানের সাথে সেবন করে থাকে। কেউ কেউ এটাকে নেশা বলেন আবার কেউ অস্বীকার করে থাকে। যে যাই বলুক, একজন আলেম বা মুত্তাকি মানুষের জন্য এ বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও এর হুকুম জানা দরকার। কারণ এতে আল্লাহ তায়ালার বিধান নির্ভর করে। হালাল হলে সমস্যা নেই, আর যদি হারাম হয়ে থাকে তবে এ থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরি। নামাজি, হাজি এবং অনেক আলেমও যেহেতু এটা সেবন করে থাকেন এ জন্য তামাকজাত দ্রব্যের হুকুম কী হতে পারে বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ সময় ব্যয় করে গবেষণাধর্মী এ প্রবন্ধটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম।
জর্দার উৎসঃ
জর্দার উৎস মূলত তামাক গাছ। এ গাছের আদি নিবাস উত্তর আমেরিকায়। এ গাছে রয়েছে অত্যন্ত নেশাদায়ক পদার্থ। তামাকের মূল নেশাদায়ক উপাদান নিকোটিন যা এক প্রকারের স্নায়ুবিষ (নিউরোটক্সিন), একধরনের অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টরের (কোলিনার্গিক অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টর) উপর কাজ করে। তামাক থেকে সৃষ্ট ধোঁয়াতে নিকোটিন ছাড়াও নানা ক্যানসারপ্রদায়ী পদার্থ থাকে, যেমন বেঞ্জোপাইরিন ইত্যাদি বহুচক্রী অ্যারোম্যাটিক যৌগ। তামাক অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ, একখানি সিগারেটে যতখানি তামাক আছে তা চিবিয়ে খেলে পুরোপুরি যদি শরীরে প্রবেশ করত, তা থেকে দ্রুত মৃত্যু অনিবার্য।
অখাদ্য থেকে খাদ্যে পরিণত করা এক গাছঃ
তামাক গাছ কোনো খাদ্যদ্রব্যের গাছ নয়। এটি সবজি বা মানবজাতির উপকারী কোনো উদ্ভিদও নয়। কিন্তু বিকৃত কিছু মানুষ এটা থেকে নেশা উৎপাদন করে মানবজাতিকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ নেশাদ্রব্যটি মানুষ বিভিন্নভাবে সেবন করে থাকে।
ক. ধোঁয়াযুক্ত সেবন। যেমন সীসা, পাইপ, সিগারেট ও বিড়ির মাধ্যমে।
খ. ধোঁয়াবিহীন সেবন। যেমন- গুল, সাদাপাতা, জর্দা ইত্যাদি।
জর্দা তৈরির উপাদানঃ
আপনার খাদ্য তালিকার মজাদার-সুগন্ধি এই জর্দা তৈরি হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিকের মিশ্রণে। বাজারে থাকা এসব জর্দা পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে লেড, ক্রোমিয়াম ও ক্যাডমিয়ামের মতো ভারি ধাতু।
জর্দার ক্ষতিকর দিকসমূহঃ
তামাক বা জর্দা সেবনের ফলে হাতের আঙ্গুল, ঠোট, দাঁত কালো হয়। দাঁতের মাড়ি ক্ষয়ে যায়। গলার ক্ষতি হয়; এতে করে পেপটিকালসার হয়। ক্ষুধা কমে যায়। স্বাস্থ্য খারাপ হয়। কোষ্ঠ কাঠিন্য হয়। যৌন শক্তি কমে যায়। স্মৃতি শক্তিও কমে যায়। এছাড়াও বহু রোগের কারণ হলো তামাক। তামাক সেবনে যক্ষ্মা, ব্রংকাইটিস, দন্তক্ষয়, ক্ষুধামন্দা, গ্যাস্টিক, আলসার, ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ প্রভৃতির মতো মারাত্মক রোগ হয়।
ক্ষতির প্রমাণঃ
ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা ৩০ কোটি মানুষকে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে আটকে রেখেছে। ভারতে ২২ কোটি, বাংলাদেশে ২ কোটি ২০ লক্ষ এবং মিয়ানমারে ১ কোটি ১০ লক্ষ লোক ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে। নারী সেবনকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভারত ও বাংলাদেশে। বিশ্বের ৭০টি দেশের ৩০ কোটি মানুষ সরাসরি তামাক পাতা গ্রহণ করে। এদের ৮০-৮৬ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতের।
জর্দা খাওয়া হালাল, না হারাম?
হারাম বা হালাল বলার আগে আমরা আরও কিছু বিষয় জেনে নিই। যেহেতু এটি আধুনিককালের একটি নেশা। আর জর্দার নাম সরাসরি কুরআনুল কারিম বা সুন্নাহতে আসেনি। কিন্তু ইসলামি শরিয়ার মৌলিক উসূল বা নীতি অনুযায়ী যে সকল কারণে কোনো বস্তু বা বিষয় হারাম হয় তার নিম্নোক্ত বিষয়গুলো এতে পাওয়া যায়—
ক. তামাকে রয়েছে নিকোটিন যা নেশার অন্যতম উপাদান আর নিকোটিন এক প্রকারের স্নায়ুবিষ (নিউরোটক্সিন)
খ. ক্যানসারপ্রদায়ী পদার্থ থাকে, যেমন বেঞ্জোপাইরিন যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ।
গ. এ ছাড়াও এতে রয়েছে এক্রোলিন ও নাইট্রোস্যামাইনসহ ১৯ প্রকার ক্ষতিকর দ্রব্য যা সরাসরি মানবদেহকে ক্ষতির মুখে ফেলে দেয়।
তামাক-জর্দা মানবদেহের অভ্যন্তরে সরাসরি যে সকল বিষয়ে ক্ষতি করে থাকে— মৃত্যুর কারণ, ক্যানসার, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, বৃক্কীয়, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মুখগহ্বরে সংক্রমণ, যৌন অক্ষমতা, বন্ধ্যাত্ব, মানসিক চাপ, মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব, গর্ভাবস্থায় সন্তানের ওপর প্রভাব ইত্যাদি।
জর্দায় উল্লেখিত ক্ষতিকর কারণসমূহ বিদ্যমান থাকবার কারণে আল্লাহ তায়ালার এই বাণী—
وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
‘তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ [সুরা বাকারা, আয়াত-১৯৫]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী—
كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ
‘প্রত্যেক নেশাজাত দ্রব্যই মাদক (খামর) আর প্রত্যেক নেশার জিনিসই হারাম।’ [মুসলিম]
আর এত ক্ষতিকর উপাদান থাকবার পরেও কেউ যদি এই বস্তু সেবন করে এবং এর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তবে এটি নিশ্চিত আত্মহত্যার শামিল হবে।
শুপারির রসায়ন দেখুনঃ
শুপারীতে অত্যন্ত নেশাদায়ক পদার্থ থাকে যা নেশী খেলে মেশা হয়, তবে কাচা শুপাটীতে এই নেশা জাতীয় পদার্থ বেশী থাকে যার কারনে নতুন পানখোররা কাচা শুপারী খেলেই মাতাল হয়ে যায়। শুপারির মূল নেশাদায়ক উপাদান নিকোটিন না হলেও যা এক প্রকারের স্নায়ুবিষ (নিউরোটক্সিন) থাকে, একধরনের অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টরের (কোলিনার্গিক অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টর) বলা হয়। তাই শুপারীও নেশা সৃষ্টিকারী পদার্থ তাই এটাও হারাম।
অখাদ্য থেকে খাদ্যে পরিণত করা এক গাছঃ
তামাক গাছ কোনো খাদ্যদ্রব্যের গাছ নয়। এটি সবজি বা মানবজাতির উপকারী কোনো উদ্ভিদও নয়। কিন্তু বিকৃত কিছু মানুষ এটা থেকে নেশা উৎপাদন করে মানবজাতিকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ নেশাদ্রব্যটি মানুষ বিভিন্নভাবে সেবন করে থাকে।
ক. ধোঁয়াযুক্ত সেবন। যেমন সীসা, পাইপ, সিগারেট ও বিড়ির মাধ্যমে।
খ. ধোঁয়াবিহীন সেবন। যেমন- গুল, সাদাপাতা, জর্দা ইত্যাদি।
জর্দা তৈরির উপাদানঃ
আপনার খাদ্য তালিকার মজাদার-সুগন্ধি এই জর্দা তৈরি হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিকের মিশ্রণে। বাজারে থাকা এসব জর্দা পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে লেড, ক্রোমিয়াম ও ক্যাডমিয়ামের মতো ভারি ধাতু।
অতএব, উল্লেখিত উসুলের ভিত্তিতে জর্দা ও তামাক জাতীয় দ্রব্য কেন হারাম হবে না আশা করি বিষয়টি দেশের বড় বড় দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো আমলে নিয়ে জর্দা কেন হারাম নয় অথবা জর্দা কেন হালাল তার ব্যাখ্যা প্রদান করবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ