expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪

যে প্রশ্নের মুখোমুখি জামায়াত

জামায়াত যে ঐতিহাসিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর আজও দিতে পারে নি




বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিগত ৫৪ বছর যাবত ১৯৭১ সালে তাদের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছে কিংবা কৌশলে পাশ কাটাচ্ছে। এটা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক ও নেতা-কর্মী, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছাত্র শিবিরের জন্য বড় বেদনা দায়ক বটে।

এই বিষয়টি কয়েক বছর যাবৎ ধামাচাপা পড়ে থাকলেও গত কিছুদিন আগে ডয়েচে বেলের সাবেক বাংলাদেশ প্রতিনিধি খালেদ মহিউদ্দিন কর্তৃক জামায়াতের আমিরকে একই প্রশ্ন করাতে তিনি যখন সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তরটি দিতে অস্বীকৃতি জানান তখনই বিষয়টি আবার সামনে আসে।

মি.খালেদ মহিউদ্দিনের প্রশ্নটি ছিলো বাংলাদেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করা হলো ২০২৪ সালে অনেক রক্তের বিনিময়ে,আপনারা আন্দোলন কারীদের পক্ষে ছিলেন,জামায়াতের ছাত্র শিবিরের অবদানই সবচেয়ে বেশী কিন্তু ১৯৭১ সালে তো পাকিস্তানও আমাদের উপর স্বৈরশাসন চালিয়েছে, গনহত্যা চালিয়েছে, তখন আপনারা পশ্চিমাদের পক্ষ নিয়েছিলেন কেনো? এ প্রশ্ন শোনে জামায়াত আমীর হতভম্ব হয়ে প্রশ্নের উত্তরটি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বসে। তাঁর এই অস্বীকৃতির কি অর্থ বহন করে এবং জামায়তে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে কি প্রভাব ফেলতে পারে এটা সহজেই অনুমেয়।

যাই হোক জামায়াতের বর্তমানে আহলে হাদিস সমর্থিত সাবেক কমিউনিস্ট কর্মী ডা.শফিকুর রহমান যাই বলুক না কেনো এই প্রশ্নটির একটি বাস্তব সম্মত উত্তর ও সঠিক কারন জামায়াতের সাবেক নেতারা বলে দিয়ে গেছেন। আমি আমার মতো করে উত্তরটি বর্তমানের আলোকে দিচ্ছি।আর এটাও জানি জামায়াত ও শিবিরের লোকোরা আমার কথা পছন্দ করবে না, আর আমিও এই জামায়াতকে পরামর্শ দিয়ে কোনো প্রবন্ধ ৫ আগস্টের পর হতে দেই না।আজ দিলাম বাধ্য হয়ে।

জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আ'লা মওদুদী (রাহি:) তাঁর দল প্রতিষ্ঠার পর হতেই ভারত বর্ষে স্বাধীন ভাবে মুসলমানদের জীবন চালানোর জন্য একটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করে। প্রথমে বর্তমান যে পাকিস্তান আছে তা মুসলিম লীগের প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী। এ কাঠামোতে যে ত্রুটি ছিলো তা বর্তমান পাকিস্তানের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বুঝা যায়। কিন্তু বিচক্ষণ মাওলানা মওদূদী এটা আগেই উপলব্ধি করতে পেরে শিয়া নেতা মি. কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক বিরোধিতা করলেও মাওলানা মওদূদী তা মেনে নিয়ে পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়। তার পর ২৪ বছর চলে অখন্ড পাকিস্তান।

১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলা তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর যখন উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিয়ে ছিলো তখন জামায়াত সমর্থিত ঢাকসুর তখনকার জিএস গোলাম আজমই প্রথম বাংলা ভাষার দাবীতে আন্দোলন শুরু করে এবং ভাষা আন্দোলনকে সুগঠিত করে ১৯৫২ সালে সফলাতা পায়। আর এই আন্দোলন ও রক্তদানও ছিলো বাংলাদেশীদের ন্যায্য অধিকারের জন্যই। 

জামায়াত নেতারা বরাবরই বিচক্ষন ও দূর্দশী হয়। তারা ১৯৭১ সালে যখন মুক্তি যুদ্ধের পটভুমি তৈরী হয় তখন জামায়াত নেতারা দেখলো যে ভারত তার অখন্ড ভারত মাতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আগরতলায় ষড়যত্র চুক্তি করে। জামায়াত নেতারা বুঝতে পারে যে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার মূলো ঝুলিয়ে আদতে ভারত তাদের স্বার্থ হাসিল করছে আর অপর দিকে ১৯৪৯ সালে ও ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সৈনিকদের হাতে আরব ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের মার খাওয়ার প্রতিশোধ হিসাবে ইসরায়েল ও ভারত যৌথ ভাবে কাজ শুরু করে।
জামায়ত নেতারা বর্তমান স্বাধীন  বাংলাদেশের অবস্থা শেখ মুজিব ও তার পরবর্তী জেনারেশনের হাতে কি হবে তাও তারা উপলব্ধি করতে পেরে ছিলো। আর তখনই জামায়ত এই অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে ও স্বাধীন বাংলাদেশের ভারত নির্ভরতা ও নতুন পরাধীনতার কথা ভেবে তখন স্বাধীনতার যুদ্ধের বিরোধিতা করে। শেখ মুজিবের ভারতের প্রতি আনুগত্য রেখে এই স্বাধীনতার বিরোধীতা শুধু জামায়াতই তখন করে নি, মাওলানা ভাষানী, একে ফজলুল হক ও অনেক কমিউনিস্ট নেতারাও করেছিলো।

পরে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়,  পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশকে বওরান ভূমিতে পরিনত করে। শুরু হয় অত্যাচার।হাজাট হাজার মা-বেনের ইচ্জ্জত হরন করে।

এই রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী এবং পাকিস্তার সেনা বাহিনী তো কোনো রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে এই অত্যার করে নি। রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীতে যারা কাজ করেছে তারা পূর্ব পাকিস্তানের সকল মতাদর্শর মানুষই চকুরী নিয়েছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনুগত হিসাবে। 

আর পাকিস্তান সেনা বাহিনীতেও তখন অনেক বাংলাদেশী তাদের অনুগত হিসাবে কাজ করেছে। কিন্তুমতারা কেউ ই কোন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে যেহেতু ছিলো না, সেহেতু জামায়াতের পরিচয়েও নিশ্চয়ই ছিলো না। 

তার পর পাক বাহিনী যে অত্যাচার করেছে, গন হত্যা করেছ, নারীর উপর পৈশাচিক নির্যাতন করেছে তা যুদ্ধ কালীন বাহিনী করেছে এবং অবশ্য মানবতা বিরোধী করেছে। কিন্তু যুদ্ধের পর সব দেষ জামায়াতে ইসলামীর উপর ট্যাগ করে দেয় তখনকার ভারতীয় অনুগত শেখ মুজিব প্রশাসন কেননা ভারতও জানত কখনোই যদি বাংলাদেশে ভারতের শোষনের বিরোধিতা কোন রাজনৈতিক দল করে তাইলে তা জামায়াতে ইসলামী করবে এবং সফল হবে। ভারত ৫৪ বছর আগে বর্তমান বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার কথা আঁচ করতে পেরে ১৯৭১ সালের পর হতেই জামায়াতকে দমন করার জন্য উঠে পরে লেগে যায়, আর জামায়তও ৫৪ বছর আগে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার কথা উপলব্ধি করে পাকিস্তান বিভক্তির বিপক্ষে ছিলো, ভারত ৫৪ বছর আগে জামায়াতের বর্তমান ভারত বিরোধিতার কথা উপলব্ধি করে জামায়াত দমনে সর্বদা সচেষ্ট থাকে।

এখানে জামায়াত ও ভারত দু পক্ষই দুটি বড় ঐতিহাসিক ভুল করে আসছে।
১। ভারত শুধু আওয়ামিলীগ নামক দলটিকেই তাদের অনুগত হিসাবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের জনগনকে উপেক্ষা করেছে।

২। জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করার আসল কথা জনগনকে বুঝানোর চেষ্টা করে নি আর অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে থেকে ভারত বিরোধিতার কথা মুখে আনতে সাহস করে নি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন অন্যায় ও অবিচারের দায় যে রাজনৈতিক ভাবে তাদের নয় তাও তারা কখনো মানুষকে বুঝায় নি।

জামায়াত যদি পাক বাহিনীর গনহত্যার দায় তাঁদের ঘাড়ে নিতে হয় তাইলে বাংলাদেশের বর্তমান সকাল সরকারী চাকুরীজীবি ও আওয়ামিলীগের সাথে থাকা জাতীয় পার্টির সকল নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার নির্যাতনের দায় নিতে হবে। অথচ এখনও জাতীয় পার্টির কোন নেতাকর্মীর বিরোদ্ধে কোন মামলা হয় নি।

জামায়াতে ইসলামীর সব চেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা ছিলো পাক বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের নিন্দা জানানোর ব্যর্থতা। 

এই ব্যর্থতারও একটা বড় ঐতিহাসিক বাধ্যগত কারন ছিলো যআর তা হলো তখন জামায়াত নেতারা নিষিদ্ধ হয়েছিলো মুজিব প্রশাসনের নিকট, সাথে ভারতের জামায়াত দমন নীতি। তখন ভেবেছিলো জামায়াত যদি পাকিস্তানেরও বিরোধিতা করে তখন তো তাদের আর রাজনৈতিক আশ্রয় থাকতো না।

যাই হোক জামায়াত এই বিষয় গুলো জনগনের সামনে আনতে যদিও অনেক দেরী করে ফেলেছে, এখন তো সময় এসেছে এগুলো সামনে আনার, জনগনকে অবহিত করার। কোনো সত্য কথা বললে বেশী প্রমান লাগে না, কথাতেই অনেকটা বুঝা যায়, জামায়াত সত্য তুলে ধরুক, জনগন বুদ্ধি দিয়ে বিচার করবে।

কিন্তু ডা.সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের যেভাবে এই ঐতিহাসিক প্রশ্নের দায়সারা উত্তর দেয় এবং জামায়াতের বর্তমান আমীর আহলে হাদিস সমর্থিত সাবেক কমিউনিস্ট নেতা ডা.শফিকুর রহমান যে ভাবে সত্য উপস্থাপনে অস্বীকৃতি জানায় তাতে বর্তমান বিচক্ষন তরুনদের নিকট আবারো জামায়াতকে ১৯৭১ এর ভিলেন হিসাবেই প্রকাশ করে যা এই সময়ে অত্যন্ত দু:খ জনক।

আমার এই লেখাটি যদি কেউ কপি করেন তাইলে কপি শব্দটা ব্যবহারের সবিনয় অনুরোধ রইলো। 

লেখকঃ চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

ভোলাগঞ্জের পাথরের নীচে চাপা পড়া সত্য, ভারতের দালালির পোস্টমর্টেম

  ভোলাগঞ্জের পাথরের নীচে চাপা পড়া সত্য, ভারতের দালালির পোস্টমর্টেম  প্রকৃতি ধ্বংশ ও তার বিরূপ আচরনের পেছনে যতটা না প্রকৃতি নিজেই দায়ি তার চে...