"বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি যেন ধর্ম না হয়"
![]() |
জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি কি হবে? |
আমার লেখার শিরোনাম দেখে অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে হয়ত, কেননা ইসলামি রাজনীতির আজীবন কর্মী কিভাবে এমন কথা বলল!! না ভাই লেখা শেষ পর্যন্ত পড়ুন তার পর বুঝবেন।
১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ব্রিটিশরা ভারত ও পাকিস্তান ভাগ করলেও এটা সুষম বন্টন ছিলো না। দুটি দেশ তৈরীতে যেমন মুসলমানদের উপকার হয়েছে তেমনী শুধু মাত্র ধর্মীয় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভুমি আলাদা করাতে সাংস্কৃতিক বৈষম্যটা আবার রয়েই গেছে। উদাহরন সরুপ বাংলা ভাষা আন্দোলন, বর্তমানে মনিপুর বাসীদের আন্দোলন এর সবচেয়ে বড় উদাহরন।
যাই হোক বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি কেনো ধর্ম নয় বরং বাংলাদেশী হওয়া উচিত তা জানা দরকার।
যদিও বাংলাদেশকে বলা হয় ৯৫% মুসলমানের দেশ, আদতে তা ৮৫% এর মত মুসলমান। যাই হোক ৮৫% আর ৯৫% কেনটাই বড় নয়, বড় হলো দেশের প্রত্যকটা মানুষেরই সমান ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা। বাংলাদেশে মুসলমান বাদেও উইকিপিডিয়ার সূত্র মতে প্রয় আরো ৫১ টি বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর লোকের বসত। এখানে সবাই বাংলাদেশটাকে নিজের দেশ মনে করে, মনে করতেই হবে। যে দেশে তাদের জন্ম সে দেশটাকেই মাতৃভূমি মনে করবে এটাইতো স্বাভাবিক। ৫% হোক আর ১৫% হোক অথবা যে পরিমানই হোকনা কেনো সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম জনগন কি তাদেরকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ গঠন করতে পারবে? যদি ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েমও হয় তথাপিও এই কম সংখ্যক মানুষের বাকী ৫১টি জাতির তাদের জাতীয় পরিচয় কি হবে? এদেশে জন্ম নিয়ে কি তারা এদেশের উপজাতী কিংবা দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে থাকবে?
যাক, এগুলো তাত্ত্বিক কথা, এখন দেখি জাতীয় ঐক্য ও বহি: শক্তি এবং সম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার মূল ঐক্যের ভিত্তি কি হবে। ধরেন জাতীয় ঐক্যের মূল শক্তি যদি ধর্ম হয় তাইলে হিন্দুরা পাশে চাইবে তাদের শক্তি, সাপোর্ট হিসাবে ভারতকে এবং ভারতের আধিপত্য বৃদ্ধিতে তারা খুশি হবে,বৌদ্ধরা চাইবে পাশের দেশ মায়ানমারকে, খ্রিস্টানরা চাইবে এদেশে ব্রিটিশদের এবং মিশনারীদের আধিপত্য বৃদ্ধি পাক। মুসলমানদেরও একদল চাইবে এদেশে পাকিস্তানের পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি পাক, আরেকদল যারা স্বৈরাচার, খুনী হাসিনার দাশ তারা চাইবে ভারতের আধিপত্য বৃদ্ধি পাক, অন্যান্য জাতিরাও তারা নিজেদের মত শক্তিকে পাশে পেতে চাইবে, আর এই কারনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্রাজ্যবাদী শক্তি বিভিন্ন ধর্মের লোককে কাজে লাগিয়ে সহজেই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারবে।
এই দেখুন না গত তিন মাসে ভারত তার চির সঙ্গী হাসিনাকে প্রতিস্থাপনের জন্য হিন্দু ধর্মের লোকদেরকে ইসকনের ছায়াতলে একত্রিত করে কি ঝামেলাটাইনা বাঁধিয়ে রাখছে। কিন্তু হিন্দুরা যদি বুঝত যে ভারতের বিজেপি বাংলাদেশের হিন্দুদের বন্ধু নয়, তারা মাইনরিটি ট্রাম্পকার্ড ইস্যু ব্যবহার করে ২০২৬ সালে ভারতের হিন্দুদের সহানুভুতি হাতিয়ে ভোটের বাক্স ভরতে চায় আর অপর দিকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় হিন্দু নির্যাতনকারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রতিস্থাপন করে তারা তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ হসিল করতে চায় তবে তারা কখনোই ভারতের ফুটবল হিসাবে ব্যবহৃত হত না।
ইসকন সমর্থিত হিন্দুরা বুঝতে হবে বাংলাদেশ নিজের দেশ, বাংলাদেশকে নিজের দেশ বললেই হবে না, তা ধারনও করতে হবে। মুসলমানরা ভারতে এত এত নির্যাতন সহ্য করার পরও কি কেউ দেখাতে পারবে যে ভারতের কোনো মুসলিম তাদের দেশের চির শত্রু পাকিস্তানে তাদের দেশের বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ করে দিচ্ছে? না, ভারতের মুসলমানরা নির্যাতিত হলেও তারা তাদের দেশকে নিজের দেশ মনে করে। ভারতের মুসলিমরা নিজ দেশের ঐক্যের শক্তিকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে নি,তারা নিজ দেশকে নাগরিক হিসাবে এবং নিজের মাতৃভূমি হিসাবে ধারন করে।
কিন্তু বাংলাদেশের বেশির ভাগ হিন্দুরা কি করে? বাংলাদেশে পান থেকে চুন খসলেই ভারত, চীন, জার্মানি এবং আমেরিকার কাছে নিজের দেশের বিষয়ে নালিশ করে। এক দেশে থাকবেন, আর কোনো কিছু নিয়ে ব্যক্তিগত ঝামেলা হলেও বিদেশের কাছে নালিশ করেন, এতে করে কি প্রমান হয় না যে আপনারা বাংলাদেশটাকে নিজের দেশ মনে করেন না?
ধর্মীয় সম্প্রীতি ভারত কিংবা আমেরিকার কাছে শিখতে চান? ভারত কিংবা আমেরিকায় কখনো দেখেছন যে বন্যা কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় সকল ধর্মের লোকেরা তাদের ধর্মীয় আচার ও অনুষ্ঠানের জমানো টাকা প্রান উজার করে দেশের মানুষকে বিলিয়ে দিতে? ঐ সকল দেশে দেখেছেন কখনো মাদরাসার ছাত্ররা মন্দিরের নিরাপত্তা দিতে? তাইলে ওদের কাছে কেনো যাচ্ছেন সম্প্রীতি শিখতে? হিন্দু বলেন আর বৌদ্ধ বলেন আর সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিমই বলেন, যতই চেষ্টা করেন মাতৃ ভূমির টান চাইলেও ছিঁড়তে পারবেন না বরং বহি: শক্তিকে দেশের ভিতর নাক গলানোর সুযোগ করতে গিয়ে নিজেকে মোনাফেকের খতায় নাম লেখাবেন।
আর মুসলমানরা যদি ইসলামি সালতানাত কায়েমও করে ফেলে তাইলেও অমুসলিমদের অধিকার বলে একটা হক্ব মুসলমানদের উপর অমুসলিমদের আছে, সেটা নিশ্চিত করেই ইসলামী সালতানাত কায়েম করতে হবে। আর এটা কায়েম করতে পারলে অথবা অমুসলিমরা এটা আদায় করতে পারলে কিংবা সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানকে এই অধিকার দিতে বাধ্য করতে পারলে আর কিছু লাগবে না।
আর বাংলাদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানও অমুসলিমদের অধিকারের প্রতি আরে সচেষ্ট হতে হবে। বছরে একদিন মদিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই হবে না, সংখ্যায় কম ভিন্নধর্মাবলম্বীদের কোথাও কেউ অহেতুক অপমান করছে কিনা, তাদের জান মালের উপর কোনো মুসলমান হতক্ষেপ করছে কিনা তা দেখে তাদের অধিকার ও ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা দেওয়ার চেষ্টাও করতে হবে যেন তারা সংখ্যায় কম বলে নিজেদের নিরীহ মনে করে মুখ প্রতি অন্যায় সহ্য করতে না হয়।
এভাবে সকলে বাংলাদেশকে নিজেদের দেশ মনে করলে এবং সবাই সবার অধিকারের শ্রদ্ধাশীল হলে তবেই বাংলাদেশের স্থায়ী জাতীয় ঐক্য হবে। কোনো ধর্মের লোক নিজের দেশে নিজেকে অসহায় মনে করবে না, দেশকে ভালবাসবে, ঐক্য দৃঢ় হবে, টেকসই হবে, চিরস্থায়ী হবে ইনশাআল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ