"ইসলামে অন্ধ অনুকরন নিষেধ হলে পীরের মূরীদ হওয়া এবং শায়েখের অন্ধ অনুসারী হওয়া হারাম"
বিবেক-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে কোনো কিছুর অন্ধ অনুকরণ ইসলামে অনুমোদিত নয়। যারা সত্যের বিপরীতে অন্ধ অনুকরণের অংশ হিসেবে পূর্বপুরুষের সংস্কার, মতবাদ ও বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে পবিত্র কোরআনের অসংখ্য স্থানে তাদের নিন্দা করা হয়েছে।
আল্লাহ ইরশাদ হয়েছে,
وَ اِذَا قِیْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ وَ اِلَى الرَّسُوْلِ قَالُوْا حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَیْهِ اٰبَآءَنَا ؕ اَوَ لَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا یَعْلَمُوْنَ شَیْئًا وَّ لَا یَهْتَدُوْنَ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, এসো সেই বিধানের দিকে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং এসো রসূলের দিকে, তখন তারা জবাব দেয়, আমাদের বাপ-দাদাকে যে পথে পেয়েছি সে পথই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তারা কি নিজেদের বাপ-দাদারই অনুসরণ করে চলবে, যদিও তারা কিছুই জানতো না এবং সঠিক পথও তাদের জন্য ছিল না? ( সুরা মায়িদা, আয়াত : ১০৪)
অন্ধ আনুগত্যের পরকালীন পরিণতি:
অন্ধ অনুকরণ ও আনুগত্যের পরকালীন পরিণতি হবে ভয়াবহ।
এখন আমরা কি দেখি? ইসলামে সবচেয়ে বেশী অন্ধ অনুকরন ও অন্ধ অনুসরন এখন কোথায় হচ্ছে? পীরের মূরীদ ও খানকা শরীফ গুলোতে কি হয়? সেখানই সবচেয়ে বেশী অন্ধ অনুকরন হয়। আর হয় শায়েখ পূজারীদের ক্ষেত্রে অন্ধ অনুকরন।
এই পীরের মূরীদ ও শায়েখ পূজারীরা এতটা অন্ধ ভক্ত হয় যে তাদের পীর কিংবা শায়েখের ভুলের বিষয়ে কোরআন ও হাদিস হতে কেউ হাজারো প্রমান দিলেও তারা মানতে চায় না।এক পীরের মূরীদরা অন্যপীরের মূরীদদের আহত করতে কিংবা এক শায়েখের অনুসারীরা অন্য শায়েখের ভক্তদের আহত করে বসে এমন কি এক শায়েখের অনুসারীরা আরেক শায়েখকে সরাসরি গায়ে হাত পর্যতন্ত দিতেও দিধা করে না শুধু মাত্র অন্ধ অনুকরনের জন্য। অথচ ইসলামে এই ধরনের ব্যক্তি পূজা ও অন্ধ অনুকরন সম্পূর্ন হারাম।
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে এই অন্ধ অনুকরনের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে:
১. পরকালে অনুসারীরা অনুগতদের দোষারোপ করবে :
وَ قَالُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّاۤ اَطَعْنَا سَادَتَنَا وَ كُبَرَآءَنَا فَاَضَلُّوْنَا السَّبِیْلَا
আরো বলবে, “হে আমাদের রব! আমরা আমাদের সরদারদের ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে।
(সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬৭)
رَبَّنَاۤ اٰتِهِمْ ضِعْفَیْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَ الْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِیْرًا۠
হে আমাদের রব! তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দাও এবং তাদের প্রতি কঠোর লানত বর্ষণ করো।”
(সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬৮)
৩. নেতারা দায় অস্বীকার করবে :
وَ قَالَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا لَنْ نُّؤْمِنَ بِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَ لَا بِالَّذِیْ بَیْنَ یَدَیْهِ ؕ وَ لَوْ تَرٰۤى اِذِ الظّٰلِمُوْنَ مَوْقُوْفُوْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْ ۖ ۚ یَرْجِعُ بَعْضُهُمْ اِلٰى بَعْضِ اِ۟لْقَوْلَ ۚ یَقُوْلُ الَّذِیْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِیْنَ اسْتَكْبَرُوْا لَوْ لَاۤ اَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِیْنَ
এ কাফেররা বলে, “আমার কখখনো এ কুরআন মানবো না এবং এর পূর্বে আগত কোন কিতাবকেও স্বীকার করবো না।” হায়! যদি তোমরা দেখো এদের তখনকার অবস্থা যখন এ জালেমরা নিজেদের রবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। সে সময় এরা একে অন্যকে দোষারোপ করবে। যাদেরকে দুনিয়ায় দাবিয়ে রাখা হয়েছিল তারা ক্ষমতাগর্বীদেরকে বলবে, “যদি তোমরা না থাকতে তাহলে আমরা মু’মিন হতাম।” (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩১)
قَالَ الَّذِیْنَ اسْتَكْبَرُوْا لِلَّذِیْنَ اسْتُضْعِفُوْۤا اَنَحْنُ صَدَدْنٰكُمْ عَنِ الْهُدٰى بَعْدَ اِذْ جَآءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُّجْرِمِیْنَ
ক্ষমতাগর্বীরা সেই দমিত লোকদেরকে জবাবে বলবে, “তোমাদের কাছে যে সৎপথের দিশা এসেছিল তা থেকে কি আমরা তোমাদেরকে রুখে দিয়েছিলাম? বরং তোমরা নিজেরাই তো অপরাধী ছিলে।”
(সাবা, আয়াত: ৩২)
وَ قَالَ الَّذِیْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِیْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ الَّیْلِ وَ النَّهَارِ اِذْ تَاْمُرُوْنَنَاۤ اَنْ نَّكْفُرَ بِاللّٰهِ وَ نَجْعَلَ لَهٗۤ اَنْدَادًا ؕ وَ اَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَ ؕ وَ جَعَلْنَا الْاَغْلٰلَ فِیْۤ اَعْنَاقِ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا ؕ هَلْ یُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ
সেই দমিত লোকেরা ক্ষমতাগর্বীদেরকে বলবে, “না, বরং দিবারাত্রের চক্রান্ত ছিল যখন তোমরা আমাদের বলতে আমরা যেন আল্লাহ কুফরী করি এবং অন্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ উপস্থাপন করি।” শেষ পর্যন্ত যখন তারা আযাব দেখবে তখন মনে মনে পস্তাতে থাকবে এবং আমি এ অস্বীকারকারীদের গলায় বেড়ী পরিয়ে দেবো। লোকেরা যেমন কাজ করেছিল তেমনি প্রতিদান পাবে, এছাড়া আর কোন প্রতিদান কি তাদেরকে দেয়া যেতে পারে?
(সাবা, আয়াত: ৩৩)
৪.অন্ধ অনুকরন কারীরা পথ ভ্রষ্ট:
আলাহ বলেন,
قُلْ یٰۤاَهْلَ الْكِتٰبِ لَا تَغْلُوْا فِیْ دِیْنِكُمْ غَیْرَ الْحَقِّ وَ لَا تَتَّبِعُوْۤا اَهْوَآءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوْا مِنْ قَبْلُ وَ اَضَلُّوْا كَثِیْرًا وَّ ضَلُّوْا عَنْ سَوَآءِ السَّبِیْلِ۠
বলে দাও, হে আহলি কিতাব! নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না এবং তাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করো না যারা তোমাদের পূর্বে নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং আরো অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে আর সাওয়া-উস-সাবীল থেকে বিচ্যুত হয়েছে।(সূরা মায়িদা-৭৭)।
وَ اِذْ قَالَ اللّٰهُ یٰعِیْسَى ابْنَ مَرْیَمَ ءَاَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِیْ وَ اُمِّیَ اِلٰهَیْنِ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ ؕ قَالَ سُبْحٰنَكَ مَا یَكُوْنُ لِیْۤ اَنْ اَقُوْلَ مَا لَیْسَ لِیْ ۗ بِحَقٍّ ؐ ؕ اِنْ كُنْتُ قُلْتُهٗ فَقَدْ عَلِمْتَهٗ ؕ تَعْلَمُ مَا فِیْ نَفْسِیْ وَ لَاۤ اَعْلَمُ مَا فِیْ نَفْسِكَ ؕ اِنَّكَ اَنْتَ عَلَّامُ الْغُیُوْبِ
(মোটকথা এসব অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে) আল্লাহ যখন বলবেন, “হে মারয়াম পুত্র ঈসা! তুমি কি লোকদের বলেছিলে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করো?” তখন সে জবাব দেবে, সুবহানাল্লাহ! যে কথা বলার কোন অধিকার আমার ছিল না সে ধরনের কোন কথা বলা আমার জন্য ছিল অশোভন ও অসঙ্গত। যদি আমি এমন কথা বলতাম তাহলে আপনি নিশ্চয়ই তা জানতে পারতেন, আমার মনে যা আছে আপনি জানেন কিন্তু আপনার মনে যা আছে আমি তা জানি না, আপনি তো সমস্ত গোপন সত্যের জ্ঞান রাখেন।(সূরাহ মায়িদা-১১৬)
অতএব পরিশেষে এ কথা বলা যায় ইসলামে পীর ধরা, শায়েখ পূজা, অন্ধ অনুকরনেরই শামীল এবং কোরআন-হাদীস বাদ দিয়ে অন্ধ অনুকরন কারীরা অর্থাদ মূরীদ হওয়া ও শায়েখের অন্ধ অনুসারী হওয়া সম্পূর্ণ হারাম এবং জাহান্নামী।
লেখক:ডা.বশির আহাম্মদ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ