"দুনিয়া লোভী আলেম তথা ঠুন্ডা মৌলভীরা জিহ্বা বের করা কুকুরের মত"
আমার একটা সিরিজ চলছে যার শিরোনাম হক্বানী আলেম তৈরীর কারখানা ও প্রোডাক্টসের গুনগত মান৷ সেখানে আমি দুনিয়া লোভী আলেমদের বিষয়ে কলম ধরেছি আর আলেম নামের একদল মূর্খ ঠুন্ডা মৌলভী আমাকে ইসলাম বিদ্বেষী হিসাবে চিহ্নিত করছে। যাই হোক এদের বিষয়টা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। আমার কলম ভন্ড, সুবিধাবাদী, ওয়াজ ব্যবসায়ী শিশু বা*লা*দ*কার কারী ঠুন্ডা মৌলভীদের বিরোদ্ধে চলবেই।ঠুন্ডা মৌলভী সবাই ইববক্সে গালাগালি উপহার সহ হুমকী দিচ্ছে আমি মারা গেলে নাকি ওরা জানাযা দিবে না। আমি ওই সকল ঠুন্ডাদের বলি তাদের মত দুনিয়া লোভী মৌলভীদের জানাযা দিলেই কি আর না দিলেই কি। আমার পুরস্কার তো আল্লাহ দিবে, ঠুন্ডাদের আশায় নাই, বরং তারা যত আমাকে গালিগালাজ করে ততই আমার লেখার স্পীড বাড়ে। আমি প্রকৃত দ্বীনদার আলেমদের আল্লার জন্য ভালোবাসি কিন্তু ঠুন্ডাদের ঘৃনা করি হৃদয় হতে।
দুনিয়া প্রত্যাশী লোভী আলেমের ভূমিকা শয়তানের চেয়েও জঘন্যতম বলে উল্ল্যেখ করেছেন ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)।
সত্যনিষ্ঠ আলেম না চিনলে দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই হারাতে হবে।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন,যে ব্যাক্তি অধিক হাদিস জানে সে ব্যক্তি আলেম নয়। বরং যার মধ্যে তাকওয়া অধিক সে ব্যক্তিই আলেম।
[ইবনে কাছীর]
সূরা আনয়া'ম ১৭৫-১৭৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَ اتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آتَيْنُهُ ايْتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَنُ فَكَانَ مِنَ الْغُوِينَ
আর হে মুহাম্মাদ! এদের সামনে সেই ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করো, যাকে আমি দান করেছিলাম আমার আয়াতের জ্ঞান। কিন্তু সে তা যথাযথভাবে মেনে চলা থেকে দূরে সরে যায়। অবশেষে শয়তান তার পিছনে লাগে। শেষ পর্যন্ত সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েই যায়।(আয়াত-১৭৫)
وَ لَوْ شِئْنَا لَرَفَعْتُهُ بِهَا وَ لكِنَّةَ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَ اتَّبَعَ هَوَيهُ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ أَنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْ ذَلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِأَيْتِنَا فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
আমি চাইলে ঐ আয়াতগুলোর সাহায্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম কিন্তু সে তো দুনিয়ার প্রতিই ঝুঁকে রইল এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। কাজেই তার অবস্থা হয়ে গেল কুকুরের মত, তার ওপর আক্রমণ করলেও সে জিভ ঝুলিয়ে রাখে আর আক্রমণ না করলেও জিভ ঝুলিয়ে রাখে। যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে তাদের দৃষ্টান্ত এটাই। তুমি এ কাহিনী তাদেরকে শুনাতে থাকো, হয়তো তারা কিছু চিন্তা-ভাবনা করবে।(আয়াত-১৭৬)।
অর্থাদ ১৭৫ নং আয়াতে কোন এক নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উৎকৃষ্টতম নৈতিক মানও এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তাঁর যখনই কারোর কোন দুষ্কৃতির উদাহরণ দেন তখন দোষটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন না। বরং তার ব্যক্তিত্বকে উহ্য রেখে শুধুমাত্র তার দোষটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবমাননা ও লাঞ্ছনা ছাড়াই আসল উদ্দেশ্য সফল হয়ে যায়। তাই যে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত এখানে পেশ করা হয়েছে, কুরআন ও হাদীসের কোথাও তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। মুফাসসিরগণ রসূলের যুগের এবং তাঁর পূর্ববর্তী যুগের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে এ দৃষ্টান্তের লক্ষ্য বলে চিহ্নিত করেছেন। কেউ বাল আম ইবনে বাউরার নাম নিয়েছেন। কেউ নিয়েছেন উমাইয়া পেশ করা হয়েছে, কুরআন ও হাদীসের কোথাও তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। মুফাসসিরগণ রসূলের যুগের এবং তাঁর পূর্ববর্তী যুগের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে এ দৃষ্টান্তের লক্ষ্য বলে চিহ্নিত করেছেন। কেউ বাল আম ইবনে বাউরার নাম নিয়েছেন। কেউ নিয়েছেন উমাইয়া ইবনে আবীস সালতের নাম। আবার কেউ বলেছেন, এ ব্যক্তি ছিল সাইফী ইবনুর রাহেব। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উদাহরণ হিসেবে যে বিশেষ ব্যক্তির ভূমিকা এখানে পেশ করা হয়েছে, সে তো পর্দান্তরালেই রয়ে গেছে। তবে যে ব্যক্তিই এ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে তার ব্যাপারে এ উদাহরণটি প্রযোজ্য হবেই।
১৭৬ নং আয়াতে দু'টি সংক্ষিপ্ত বাক্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়টি একটু বিস্তারিতভাবে অনুধাবন করা প্রয়োজন। এখানে যে ব্যক্তির উদাহরণ পেশ করা হয়েছে সে আল্লাহর কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী ছিল। অর্থাৎ প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত ছিল। এ ধরনের জ্ঞানের অধিকারী হবার কারণে যে কর্মনীতিকে সে ভুল বলে জানতো তা থেকে দূরে থাকা এবং যে কর্মনীতিকে সঠিক মনে করতো তাকে অবলম্বন করাই তার উচিত ছিল। এ যথার্থ জ্ঞান অনুযায়ী কাজ করলে আল্লাহ তাকে মানবতার উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করতেন। কিন্তু সে দুনিয়ার স্বার্থ, স্বাদ ও আরাম-আয়েশের দিকে ঝুঁকে পড়ে। প্রবৃত্তির লালসার মোকাবিলা করার পরিবর্তে সে তার সামনে নতজানু হয়। উচ্চতর বিষয় সমূহ লাভের জন্য সে পার্থিব লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে ওঠার পরিবর্তে তার মধ্যে এমনভাবে ডুবে যায়, যার ফলে নিজের সমস্ত উচ্চতর আশা-আকাংখা, বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক উন্নতির সমস্ত সম্ভাবনা পরিত্যাগ করে বসে। তার নিজের জ্ঞান যেসব সীমানা রক্ষণাবেক্ষণের দাবী জানিয়ে আসছিল, সেগুলো লংঘন করে এগিয়ে চলতে থাকে। তারপর যখন সে নিছক নিজের নৈতিক দুর্বলতার কারণে জেনে বুঝে সত্যকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চললো, তখন তার নিকটেই ওঁৎ পেতে থাকা শয়তান তার পেছনে লেগে যায় এবং অনবরত তাকে এক অধঃপতন থেকে আর এক অধঃপতনের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। অবশেষে এ জালেম শয়তান তাকে এমন সব লোকের দলে ভিড়িয়ে দেয়, যারা তার ফাঁদে পা দিয়ে বুদ্ধি-বিবেক সব কিছু হারিয়ে বসে। এরপর আল্লাহ এ ব্যক্তির অবস্থাকে এমন একটি কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন, যার জিভ সবসময় ঝুলে থাকে এবং এ ঝুলন্ত জিভ থেকে অনবরত লালা টপকে পড়তে থাকে। এহেন অবস্থা তার উদগ্র লালসার আগুন ও অতৃপ্ত কামনার কথা প্রকাশ করে। যে কারণে আমাদের ভাষায় আমরা এহেন পার্থিব লালসায় অন্ধ ব্যক্তিকে দুনিয়ার কুকুর বলে থাকি। ঠিক সেই একই কারণে এ বিষয়টিকে এখানে উপমার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। কুকুরের স্বভাব কি? লোভ ও লালসা, হাড্ডি নিয়ে কামড়াকামড়ি করা। চলাফেরার পথে তার নাক সব সময় মাটি শুকতে থাকে, হয়তো কোথাও কোন খাবারের গন্ধ পাওয়া যাবে এ আশায়। তার গায়ে কেউ কোন পাথর ছুড়ে মারলেও তার ভুল ভাংবে না। বরং তার মনে সন্দেহ জাগবে, যে জিনিসটি দিয়ে তাকে মারা হয়েছে সেটি হয়তো কোন হাড় বা রুটির টুকরা হবে। পেট পূজারী লোভী কুকুর একবার লাফিয়ে দৌড়ে গিয়ে সেই নিক্ষিপ্ত পাথরটিও কামড়ে ধরে। পথিক তার দিকে কোন দৃষ্টি না দিলেও দেখা যাবে সে লোভ-লালসার প্রতিমূর্তি হয়ে বিরাট আশায় বুক বেঁধে জিভ ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে ঠিক যেন বর্তমানে বাংলাদেশের দুনিয়া লোভী আলেমদের কথাই ছবির মত ফুটে উঠেছে।
সে তার পেটের দৃষ্টি দিয়ে সারা দুনিয়াকে দেখে। কোথাও যদি কোন বড় মরদেহ পড়ে থাকে, কয়েকটি কুকুরের পেট ভরার জন্য সেটি যথেষ্ট হলেও, একটি কুকুর তার মধ্য থেকে কেবলমাত্র তার নিজের অংশটি নিয়েই ক্ষান্ত হবে না বরং সেই সম্পূর্ণ মরদেহটি নিজের একার জন্য আগলে রাখার চেষ্টা করবে এবং অন্য কাউকে তার ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেবে না। এ পেটের লালসার পর যদি দ্বিতীয় কোন বস্তু তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে যৌন লালসা। সারা শরীরের মধ্যে কেবলমাত্র লজ্জাস্থানটিই তার কাছে আকর্ষনীয় এবং সেটিরই সে ঘ্রাণ নিতে ও তাকেই চাটতে থাকে।
কাজেই এখানে এ উপমা দেবার উদ্দেশ্য হচ্ছে একথাটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা যে, দুনিয়াপূজারী আলেম যখন জ্ঞান ও ঈমানের বাঁধন ছিড়ে ফেলে প্রবৃত্তির অন্ধ লালসার কাছে আত্মসমর্পণ করে এগিয়ে চলতে থাকে, তার অবস্থা পেট ও যৌনাংগ সর্বস্ব কুকুরের মত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
বনি ঈসরাইলের ধর্মবিচ্যুত দুনিয়া লোভী ঠুন্ডা আলেমদের ইতিহাসঃ
কথিত আছে, বালআম ইবনে বাউরা ছিল মুসা (আঃ) -এর আমলে বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী কেনাআনের অধিবাসী এক প্রসিদ্ধ আবেদ।বলা হয়ে থাকে, সে ছিল মুস্তাজাবুদ দাওয়াত বা যার দোয়া অবশ্যই কবুল হতো।তার সময় ওই অঞ্চলের মানুষ মূর্তি পূজারী ছিল। ফেরাউনের জন্ম লগ্ন ও মিসর বিজয়ের পর মুসা (আঃ) ও বনি ঈসরাইলের প্রতি জাব্বারিন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করার হুকুম হয়েছে।মুসা (আঃ) যখন বনি ঈসরাইলের লোকজন নিয়ে সেই এলাকার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছলেন, সেই সময় ওই এলাকার অধিবাসীরা বালআমকে অনুরোধ জানাল এমন দোয়া করতে, যাতে বনি ঈসরাইলরা ধ্বংস হয়ে যায়।বালআম প্রথমে এ অনুরোধে রাজি হয়নি।পরে তাদের ধন-সম্পদের লোভে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু সে মুসা (আঃ) ও তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বদদোয়া করতে গিয়ে কুদরতিভাবে সেসব বাক্য জাব্বারিনদের বিপক্ষেই উচ্চারিত হয়েছে।ফলে তাদের নিজেদের উপরই কঠিন আযাব এলো আর বালআমের শাস্তি হলো এই যে তার জিহ্বা বেরিয়ে এসে বুকের উপর লটকে গেলো।
এখানে লক্ষণীয় হলো,অনেক বড় আবেদ হয়েও লোভ-লালসার বশীভূত হয়ে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার কারণে সাধক বালআম ইবনে বাউরা আল্লাহর অভিশাপে নিপাতিত হয়েছে।তাই আল্লাহ যাকে ইলম ও ইবাদতের মহান সৌভাগ্য দান করেন, তার উচিত অন্যদের তুলনায় বেশি সতর্ক ও দায়িত্বনিষ্ঠ হওয়া। এরূপ ব্যক্তি যদি আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে নিজের অবৈধ কামনা -বাসনার পেছনে ছুটে,তবে দুনিয়া ও আখিরাতে তার পরিনিতি হয় ভয়াবহ।
দ্বিতীয় আয়াতে সেই ব্যক্তির বিপথগামীতার প্রসঙ্গে টেনেই তাকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।কুকুরের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে সব অবস্থায় হাঁপায়। তাফসীরকারদের কেউ কেউ বলেন, এটা প্রকৃতপক্ষে জৈবিক লালসার উপমা।কুকুর সব সময়ই থাকে লালসাকাতর এবং দৃশ্যত তাকে সব সসয় দেখায় পেরেশান। এভাবে যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতি লালায়িত সে সব কিছু দিয়েই পার্থিব স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে এবং সব সময়ই পেরেশান হয়ে হাঁপাতে থাকে। হালাল -হারামের তোয়াক্কা না করে ছুটতে থাকে অর্থের পেছনে।
[তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন, তাফসীর ফি জিলালাইন, তাফহীমূল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে]
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুক।
অতএব পাঠকদের আশা করি বুঝার বাকি নাই কেনো আমি দুনিয়াবী আলেম নামক ঠুন্ডা মৌলভীদের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার।
লেখক: চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ